কুনো ব্যাঙ বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে
মানুষের বসতবাড়ির আশে পাশে কিংবা ঘরের কোনে প্রায় দেখা মেলে খসখসে আচিলযুক্ত একটি ব্যাঙের, ঘরকুনো স্বভাবের কারণে হয়তো একে কুনো ব্যাঙ বলে। আমাদের দেশে তিন প্রজাতির
কুনোব্যাঙ পাওয়া যায়।এদের মধ্যে একটি হলো Asian Common Toad, যার বৈজ্ঞানিক নাম Duttaphrynus melanostictus ।Bufonidae গোত্র বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ।এই গোত্রের ব্যাঙের অন্যমত বৈশিষ্ট হলো এদের চোখের পিছনে এবং কানের পর্দার উপরে সিমের বীচি আকৃতির একটি গ্রন্থি থাকে। এটাকে Parotid gland বলে।
তক খস খসে ও অসংখ্য আঁচিল যুক্ত।পেটের দিকটা সাদাটে। মাথা তুলনামূলক বড় ও চওড়া । দুই জোড়া পা কুনো ব্যাঙের অগ্র পদের ৪ টি ও পশ্চাদ পদে ৫ টি করে নখর বিহীন আঙ্গুল থাকে।বৃহৎ আকারের ব্যাঙ গুলার মধ্যে কুনো ব্যাঙ একটি । এরা সাধারনত ৫৭-১২০ mm হয়ে থাকে।
স্বভাব ও বসবাস : জীবনের প্রথম পর্যায়ে (ব্যাঙাচি দশা) পানিতে অবস্থান করলেও পরিপূর্ণ অবস্থায় ডাঙ্গাতে বসবাস করে। এরা দিনের বেলাতে ঘরের কোনে, মাটির গর্তে ,গাছের কোটরে নিশ্চল ভাবে থাকে। মূলত এরা নিশাচর প্রাণি। রাতের বেলাতে খাবারের সন্ধানে কিংবা প্রজননের উদ্দেশ্যে এদের সক্রিয় হতে দেখা যায়।কুনো ব্যাঙ এমন একটি প্রাণী যারা ৬ মাস ঘুমাতে পারে এক টানা।শীতল রক্ত বিশিষ্ট এই প্রাণীটি আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে এদের দেহেরও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে ।শীতকালে এদের রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে তাই অধিক
উষ্ণতার জন্য এরা মাটির গর্তে বা ঘরের কোনে নিশ্চল ভাবে থাকে ।এই সময় এরা খাদ্য গ্রহন থেকে এরা বিরত থাকে। তখন দেহের সঞ্চিত স্নেহ পদার্থ এদের দেহের শক্তি যোগায়। শীতকালীন এই নিষ্ক্রিয়তাকে শীত নিদ্রা বা হাইবারনেশন বলে।
প্রজননঃ বর্ষা কাল এদের প্রজনন সময়।প্রজনন কালে পুরুষ বেঙের গলার নিচে হালকা কমলা রঙের স্বরথলি দেখা যায়। এই সময় যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙের খুজে বাহির করে। এদের বহির নিষেক ক্রিয়া মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে ডিম পারে, অর্থাৎ এদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু শরীরে বাহিরে পানিতে মিলিত হয় এবং এখানে নিষেক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। স্ত্রী ব্যাঙ এক সাথে প্রায় ৩০০০০ ডিম্বাণু ছাড়ে।
অবস্থান : কুনো ব্যাঙ বাংলাদেশের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। এছারা ভারত সহ দক্ষিণ, পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই এই প্রজাতিটির দেখা মিলে।IUCN এই প্রজাতিটিকে Least concern বা ন্যূনতম বিপদ গ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে।
প্রকৃতিতে এদের ভুমিকাঃ এরা মশা ও মাছি ভক্ষণ করে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন- Malaria, dengue, typhoid,cho
করতে সহায়তা করে। আবার অনেক জীব জন্তু কুনো ব্যাঙ খাদ্য হিসাবে খেয়ে থাকে,ফলে খাদ্য শৃঙ্খলের ভারসাম্য বজায় থাকে। তাছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রাণীবিদ ড রাসেল গ্রান্টের কুনো ব্যাঙ নিয়ে গবেষনায় আরো চমকপ্রদ তথ্য বের হয়ে আসে ।তার গবেষনায় দেখা যায় , ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেয় কুনো ব্যাঙ । এই পূর্বাভাস ১দিন ২ দিন আগে না , প্রায় ৭ দিন আগে থেকেই এই পূর্বাভাস দিতে থাকে ।
তাই কুনো ব্যাঙের এতো উপকারিতার কথা চিন্তা করে কুনো ব্যাঙ সংরক্ষণে আমদের এগিয়ে আসা উচিৎ।
No comments:
Post a Comment