সবুজ ব্যাঙ:
প্রকৃতির রঙে রাঙ্গানো গায়ের রঙ সবুজ বলে ব্যাঙটির এমন নামকরণ হয়েছে । ব্যাঙটির ইংরেজি নাম Green Frog ও বৈজ্ঞানিক নাম Euphlyctis hexadactylus । ব্যাঙটি Dicroglossidae পরিবারের অর্ন্তগত ।
আকৃতি ও গঠন : মধ্যম আকারের ব্যাঙটি ৫২-১৩০ mm হয়ে থাকে। পুরুষ ব্যাঙটি স্ত্রী ব্যাঙ থেকে আকারে ছোট হয়ে থাকে। ব্যাঙটির মাথা চ্যাপ্টা , নাক ভোঁতা এবং চোখ মাথার খুব সন্নিকটে অবস্থিত । এদের দেহের রঙ উপরি ভাগে সবুজ এবং পেটের দিগটা হলদে বা সাদাটে হয়ে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ সবুজ ব্যাঙ উভয়ের হলদে সোনালী রঙের একটি পৃষ্ঠীয় দাগ মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্যাঙটির সামনের পায়ে ওয়েভ বিহীন ৪ টি আঙ্গুল আর পিছনের পায়ে ওয়েভ যুক্ত ৪ টি আঙ্গুল আছে।
স্বভাব : সবুজ ব্যাঙ দিন ও রাতে সমান ভাবে কর্মচঞ্চল।এরা একা থাকতে পছন্দ করে। ব্যাঙটির গায়ের রঙ জলজ উদ্ভিদের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে ( Camouflage )যায়। তাই সহজে চোখে পড়ে না। জীবনের বেশিরভাগ সময় এরা পানিতে কাটায়।
খাদ্য তালিকা : খাদ্যাভ্যাসের দিক থেকে সবুজ ব্যাঙ অন্যান্য ব্যাঙ থেকে আলাদা। খাদ্য তালিকায় অন্যান্য ব্যাঙ্গের থাকে জ্যান্ত কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ ও সামান্য পরিমাণ সবজি , কিন্তু সবুজ ব্যাঙ্গের খাদ্যের ৮০ শতাংশই আসে সবজি থেকে , বাকি ২০ শতাংশ বিভিন্ন ধরণের জীবন্ত কীটপতঙ্গ থেকে। জলাশয়ের বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, পোকামাকড়,ফরিং, শামুক-ঝিনুক ও ছোট ছোট মাছ খেয়ে এরা জীবন ধারণ করে থাকে।
প্রজননঃ মে থেকে জুলাই মাস এদের প্রজনন কাল ।সাধারণত এরা বৃষ্টির পরে প্রজনন করে থাকে। এই সময় পুরুষ ব্যাঙ গুলো সারা রাত ডাকতে থাকে। স্ত্রী ব্যাঙ এক সঙ্গে ২০০০ এর মতো ডিম পেরে থাকে।
বসবাস ও অবস্থান : জীবনের বেশীর ভাগ সময়েই এরা পানিতে কাটায় ।এরা পরিষ্কার পুকুর, লেক ও জলজ উদ্ভিদে পরিপূর্ণ এমন জলাশয়ে থাকতে পছন্দ করে থাকে। যদিও এক সময় মনে করা হইত সুন্দর বন ছারা আর কোথাউ এই ব্যাঙ পাওয়া যায় না। কিন্তু পরবর্তীতে ঢাকা, খুলনা, যশোর,বরিশাল, ফাশিয়াখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (কক্সবাজার ),মধুপুর ও ভাওয়াল গড়ের পুকুর সহ আরো কিছু এলাকাতে দেখতে পাওয়া যায় । বাংলাদেশ ছারাউ সবুজ ব্যাঙ ভারত , মিয়ানমার ও শ্রীলংকান উপদ্বীপে আছে।
প্রকৃতিতে এদের ভুমিকা: পুকুর , জলাশয় ও লেকের অতিমাত্রায় জলজ উদ্ভিদ ও পোকামাকড় খেয়ে পুকুর ও জলাশয়ের মান নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল ১ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত। IUCN এই প্রজাতিটিকে Least concern বা ন্যূনতম বিপদ গ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে।
PC: 1. Mohammad Quamruzzaman Babu
2. Prosenjit Debbarma
তথ্যসূত্রঃ
1. তফসিল -১ ( রক্ষিত বন্যপ্রাণী ) উভচর , বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০,২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা- ১১৮৪৩৯ ।
2. Amphibians and Reptiles of Bangladesh - M. Kamrul Hasan , M. Monirul H. Khan , M. Mostafa Feeroz
3. A Guide To Wildlife - M. Monirul H. Khan
4. The IUCN Red List of Threatened Species .
5. উইকিপিডিয়া
No comments:
Post a Comment