কোলা ব্যাঙ বেঁচে থাকুক আমদের প্রয়োজনে
বাংলাতে কোলা ব্যাঙ , সোনা ব্যাঙ বা ভাউয়া ব্যাঙ নামে পরিচিত ইংরেজিতে
একে Asian Bull Frog বলে, বৈজ্ঞানিক নাম Hoplobatrachua tigerinus , এটি
Dicroglossidae পরিবারের ও Hoplobatrachus গনের অন্তর্ভুক্ত উভচর প্রাণী ।
খাদ্য তালিকা : বাদামী গাছ ফরিং , সবুজ পাতা ফরিং, হলুদ মাজরা পোকা, পামরী পোকা, গাছ মাছি , মাছি , মশা ও মশার লার্ভা ইত্যাদি ।
স্বভাব : কোলা ব্যাঙ নিশাচর প্রাণী , এরা একা থাকতে পছন্দ করে। এরা যখন ডাঙ্গাতে থাকে বিপদের সম্ভাবনা দেখলে অনেক দ্রুত ও অনেক দুরুত্ত পর্যন্ত লাফ দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে । শীতল রক্ত বিশিষ্ট এই প্রাণীটি আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে এদের দেহেরও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে । শীতকালে এদের রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে তাই অধিক উষ্ণতার জন্য এরা মাটির গর্তে নিশ্চল ভাবে থাকে । এই সময় খাদ্য গ্রহন থেকে এরা বিরত থাকে। দেহের সঞ্চিত স্নেহ পদার্থ এদের দেহের শক্তি যোগায় । শীতকালীন এই নিষ্ক্রিয়তাকে শীত নিদ্রা বা হাইবারনেশন বলে।
প্রজননঃ প্রজননের ঋতুতে অর্থাৎ বর্ষার শুরুতে যখন প্রচণ্ড গর্জনে বৃষ্টি পাত হয় তখন পুরুষ ব্যাঙ মেয়ে ব্যাঙরে আকর্ষণ করতে গলা ফুলিয়ে ডাকতে থাকে । এই সময় পুরুষ ব্যাঙ অনেক বেশী আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে , পুরুষ ব্যাঙের দেহের রঙ উজ্জ্বল হয় আর স্বরথলি উজ্জ্বল নীলাভ রঙ ধারণ করে। পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙকে আঁকড়িয়ে ধরে ২-৩ ঘণ্টার মতো পানিতে ভাসতে থাকে । এর পর স্ত্রী ব্যাঙ ডিম্বাণু ছাড়ে আর পুরুষ ব্যাঙ শুক্রাণু ছাড়ে। এদের বহির নিষেক ক্রিয়া মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে ডিম পারে, অর্থাৎ এদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু বাহিরে মিলিত হয়। ডিমগুলা ফিতার মতো পানিতে ভাসতে থাকে । ২৪ ঘণ্টা পর ডিম থেকে ফুটে বেঙাচি বের হয় । প্রায় ৩৫-৪০ দিনের ভিতরে বেঙাচি পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রূপান্তরিত হয়। একটি স্ত্রী ব্যাঙ প্রাকৃতিক অবস্থায় এক সাথে প্রায় ৩-১০ হাজার ডিম্বাণু ছাড়ে ।
বসবাস ও অবস্থান : কোলা ব্যাঙ দীর্ঘ সময় ধরে জলে থাকতে পারেনা । স্থির ও স্থায়ী জলাশয়ে , পুকুড়ের কিনারের জলে ও পুকুড়ের পার্শের ডাঙ্গাতে , অল্প বিস্তর পানি আছে ও এর আশেপাশে কোলা ব্যাঙের বসবাস । বেশীর ভাগ সময়ে তার বসবাসের আশেপাশের ঝোপে লুকিয়ে থাকে খাবারের সন্ধানে।
বাংলাদেশ এর সর্বত্র কোলা ব্যাঙ দেখতে পাওয়া যায় । এ ছাড়া ভারত,নেপাল,মায়ানমার , পাকিস্থানের সিন্দু উপতেকা ও আফগানিস্থান পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃত রয়েছে।IUCN এই প্রজাতিটিকে Least concern বা ন্যূনতম বিপদ গ্রস্থ বলে ঘোষণা করেছে।
প্রকৃতিতে এদের ভুমিকা: বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কীট তত্ত্ব বিভাগের সাফল্য ডাটাতে যা সর্ব শেষ হাল-নাগাদ করা হয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে - তাতে দেখা যায় ,- বিভিন্ন মৌসুমে ধানে পোকার আক্রমণে ক্ষতির পরিমাণ ......... ধানের প্রধান প্রধান ক্ষতি কারক পোকার আক্রমণে বোরো মৌসুমে ১৩%, আউশ মৌসুমে ২৪% এবং আমন মৌসুমে ১৮% । গড়ে ১৮% ফলন কম হয়। এই গবেষণাতে আরো দেখা যায় জমিতে সোনা ব্যাঙ ক্ষতিকর পোকামাকড় শতকরা ১৬-৪১ ভাগ কমিয়ে রাখে । এইখানে একটি ফসলের তথ্য দেয়া হয়েছে । এই ভাবে যদি সব ফসলের তথ্য পাওয়া যায় তাহলে দেখা যাবে কোলা ব্যাঙ কৃষি ফসলের উৎপাদনে কতটা অবধান রাখছে । আর এই ফসলের উৎপাদিত খাদ্য বস্তুর সাথে জরিত আমাদের শাররিক ও মানুষিক বিকাশের । কীটনাশক ও রাসায়নিক সারে উৎপাদিত ফসলের মাধ্যমে আমদের শরীরে নানা রকম রোগ বালাই দেখা দেয় । আমরা যদি সচেতন হই এবং প্রাকৃতিক কৃষিতে ফিরে যাই , তাহলে আমরা অনেক প্রকার রোগ বালাই থেকে রক্ষ্যা পাবো এবং কীটনাশক ও সারের পিছনে যেই পরিমাণ টাকা খরচ হয় তা অনেকটা কমে আসবে কৃষি পণ্য উৎপাদনে ।
এছারা মশা ও মাছি ভক্ষণ করে মশা ও মাছি বাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন- Malaria, dengue, typhoid, cholera, anthrax ও desentery - এর মতো অনেক রোগ প্রতিরোধ করে কোলা ব্যাঙ। আবার অনেক জীব জন্তুর খাদ্যও কোলা ব্যাঙ, যা খাদ্য শৃঙ্খলের সহায়ক হয়ে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে জীব জগতের ।
No comments:
Post a Comment